জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি?জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারের ক্ষেত্র

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারের ক্ষেত্র

ইঞ্জিনিয়ারিং হলো বহুমুখী কাজের ক্ষেত্র। ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ প্রযুক্তির সমস্যার সমাধানের নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানব জীবনে কে উন্নতি করছে।

বিজ্ঞান গণিত এবং প্রযুক্তি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং একটি মিশ্রণ শাখা। ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে মাধ্যমে বিভিন্ন প্রযুক্তি সমস্যার সমাধান করে থাকে।

ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান কাজ হলো বিজ্ঞান সমন্বয়ে মানব জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উন্নতি করা বা কাজ করা।

ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি, সমস্যা সমাধান, এবং উন্নত মেশিন মানব জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

আজকে এই আর্টিকেলে আমরা জানবো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি? জেনেটিক  ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্র গুলা কি কি?

Table of Contents

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অপর নাম জেনেটিক মডিফিকেশন । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে জীবের ডিএনএ , জীবের  জিনোম বা জীবের কোড এর পরিবর্তন করা হয়।

ডিএনএ হলো জীবের সমস্ত তথ্য এর মূল ভান্ডার। যে ভান্ডারের মধ্যে জীবের সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং জৈবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে  ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জীবের  বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন ( বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট অংশের পরিবর্তন) , সংযোজন, অপারেশন করা সম্ভব । এই কাজ গুলো মধ্যে জীবের বৈশিষ্ট্য গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন: ক্রিস্পার-ক্যাস৯ (CRISPR-Cas9), জিন ক্লোনিং, রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি, ইত্যাদি।

আরো পড়ুন : কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ দুই ধাপে সম্পন্ন করা হয়।

  • বিজ্ঞানীরা জীবের নির্দিষ্ট একটি জিন বা ডিএনএ এর অংশ সিলেক্ট করে এবং এই অংশটি জীবের জিনোম থেকে আলাদা করে।
  • এরপর জীবের জিনটি পরিবর্তন করে পুনরায় জীবের দেহে প্রবেশ করানো হয়। ফলে জীবটি নতুন বৈশিষ্ট্য এবং গুন অর্জন করতে সক্ষম হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কাকে বলে ?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো জীবের জিন বা ডিএনএ এর মধ্যে পরিবর্তন আনার এক বিশেষ প্রক্রিয়া।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীবের একটি অংশের সংযোজন, অপারেশন করে একটি নতুন অংশ জীবের দেহে প্রবেশ করানো হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি করে, কিট নাশক এর ক্ষমতা বাড়ায়, এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঔষধ ও নানা চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেশিন যন্ত্র উন্ন করা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক কে?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক হলো পল বার্গ (Paul Berg)। পল বার্গ (Paul Berg) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক হিসেবে পরিচিত।

পল বার্গ (Paul Berg) ১৯২৬ সালে  ৩০  জুন নিউইয়র্ক  শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাউন্ট ভার্নন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন, এরপর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালে পল বার্গ (Paul Berg) স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন ।পরবর্তীতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক হিসেবে কাজ  করেন। পল বার্গ (Paul Berg) গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল ডিএনএ-র গঠন ।

১৯৭২ সালে পল বার্গ (Paul Berg) একটি জিন পরীক্ষায় সফল হন। যেখানে তিনি দু’টি ভিন্ন উৎস থেকে ডিএনএ এর সেগমেন্ট সংযুক্ত করতে সক্ষম হন।

এর মাধ্যমেপল বার্গ (Paul Berg) প্রথমবার একটি রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ (Recombinant DNA) তৈরি করেন।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংহলো জীব বিজ্ঞান এর একটি প্রধান শাখা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীবের ডিএনএ বা জিন পরিবর্তন করে নতুন গুনাবালী সৃষ্টি করে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বৈপ্লবিক প্রযুক্তি যা কৃষি, চিকিৎসা, শিল্প এবং পরিবেশবিজ্ঞানে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক হলো :

কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন : জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ফসল এর গুনাগুণ মান উন্নয়ন করা হয়।যেমন – ফসলের রোগ প্রতিরোধ, কিট নাশক প্রতিরোধ, লবন সহিষ্ণু  ফসলের জাত তৈরি করা, খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে।

চিকিৎসা ও রোগ নিরাময় : চিকিৎসা ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদান অপরিসীম। জিন থেরাপি  যেখানে বিকল জিনকে পরিবর্তন করা হয় বা প্রতিস্থাপন করা হয়। তা মানুষের বিভিন্ন বংশগত রোগ নিরাময়ে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া, ইনসুলিন, ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য প্রোটিন-ভিত্তিক ওষুধ তৈরি করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন : শিল্প ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। শিল্প ক্ষেত্রে বায়োফুয়েল উৎপাদন এবং বায়োপ্লাস্টিক তৈরিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।

খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি: খাদ্য তৈরি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য পুষ্টি ও গুনাগুণ মান বজায় রাখতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।গোল্ডেন রাইস (Golden Rice) নামক ভিটামিন এ সমৃদ্ধ চাল  তৈরি করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।

পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান: পরিবেশ সংরক্ষণ করার জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জেনেটিকালি মডিফাইড গাছপালা তৈরি করা হয়েছে। যা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করা ক্ষমতা রাখে।

গবেষণা ও উদ্ভাবন: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজে নতুন ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং বিভিন্ন ধরনের জৈব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারে।

আরো পড়ুন: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কী ? কিভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হবেন‌

মানব জীবন উন্নয়ন এর জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব আমাদের উপর নির্ভর করে। এটি ব্যবহার করে আমাদের জীবন কতটা সহজ ও উন্নত হচ্ছে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারের ক্ষেত্র কোনটি

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারের ক্ষেত্র কোনটি?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষেত্র রয়েছে । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান কিছু ক্ষেত্র হলো:

কৃষি
  • ফসল উন্নয়ন: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, কীটনাশক এবং লবন ও খরা প্রতিরোধী খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। যেমন: Golden Rice, bt cotton.
  • প্রানিজ উৎপাদন :দ্রুত বৃদ্ধি এবং অধিক দুধ উৎপাদনের জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসা
  • জিন থেরাপি: বংশগত রোগ নিরাময়  চিকিৎসায় বিকল জিন এর পরিবর্তে কার্যকর জিন এ পরিবর্তন করা হয়।
  • ঔষধ উৎপাদন:   ইনসুলিন, ভ্যাকসিন, এবং অন্যান্য প্রোটিন-ভিত্তিক ওষুধ তৈরি করার জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।
শিল্প
  • এনজাইম উৎপাদন: খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ , বায়োফুয়েল উৎপাদন এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত এনজাইম তৈরি করা হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে।
  • বায়োটেকনোলজি: মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন রাসায়নিক উৎপাদনে ব্যবহৃত মাইক্রোঅর্গানিজমের জেনেটিক পরিবর্তনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদান অপরিসীম।
খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল: ভিটামিন, প্রোটিন বা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ফসল উৎপাদন করার জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।
  • ফসলের সংরক্ষণ: খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ এর মাধ্যমে খাদ্যের প্রোটিনের ও গুনাগুণ মান বজায় রাখতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।
গবেষণা ও উদ্ভাবন
  • জিনোম: গবেষণা ক্ষেত্রে CRISPR-Cas9  প্রযুক্তির মাধ্যমে জিনোম এর কাজ করা হয়। যা বিভিন্ন রোগের  প্রতিকার আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।
  • মডেল অর্গানিজম: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে মডেল অর্গানিজম তৈরি করা হয়। যা বিভিন্ন জীববৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়।

উপরোক্ত ক্ষেত্রে গুলোতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহারের সুবিধা মানব জীবনে কে উন্নতি করছে। তেমনি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিচে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুবিধা

  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এমন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে যা রোগ প্রতিরোধে করতে সক্ষম, উচ্চ উৎপাদনশীল এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমন: ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং জেনেটিক রোগের চিকিৎসা ।  ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য বায়োমেডিকেল পণ্যের উন্নয়ন করতে সাহায্য করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে এমন উদ্ভিদ ও প্রাণী তৈরি করা সম্ভব যা পরিবেশের জন্য উপকারী। যেমন: বায়োডিগ্রেডেবল , যা পরিবেশ দূষণ কমায়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অসুবিধা

  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফলে কিছু জেনেটিকালি মডিফাইড (GM) জীবের অবমুক্তি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৈরি খাদ্য দীর্ঘমেয়াদি  নাকি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়ায় এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফসল ব্যবহার করার ফলে স্থানীয় জাত ফসলের ধ্বংস করে ।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সঠিক ব্যবহার ভাবে ব্যবহার করলে মানবজীবন উন্নতী হবে। তবে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ঝুঁকির দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিভাবে মানুষকে সহায়তা দিচ্ছে ব্যাখ্যা কর

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জীবে জেনেটিক উৎপাদন (ডিএনএ) পরিবর্তন, সংশোধন এবং পুনর্গঠন করতে পারে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:

চিকিৎসা ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা অপরিসীম। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যেমন: জিন থেরাপি ব্যবহার করে জেনেটিক রোগের চিকিৎসা করা ইত্যাদি। এই চিকিৎসার মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ বা অকার্যকর জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। যা রোগ প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে ইনসুলিন এবং অন্যান্য প্রোটিন ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। যা ডায়াবেটিস, হেমোফিলিয়া এবং আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নতুন ফসল উৎপাদন করছে। যা রোগ প্রতিরোধী, পুষ্টিকর এবং কম সময়ে উৎপাদিত হয়। যার ফলে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সহজ হয়ে উঠেছে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রাণী থেকে মানুষের জন্য অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনে মানুষের অনেক অনেক সুবিধা হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি অন্যতম বয় সাফল্য এটি।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কাস্টমাইজড ইমিউনোথেরাপি তৈরি করতে সাহায্য করছে ।যা ক্যান্সার কোষগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করতে পারে এমনকি ধ্বংস করতে ও সহায়তা করে থাকে।

উপরোক্ত উদাহরণ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করছে তা প্রমাণ বা প্রতিফলিত হচ্ছে।

বায়োইনফরমেটিক্স ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে পার্থক্য

বায়োইনফরমেটিক্স ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দুইটি ভিন্ন ক্ষেত্র। তবে দুই টি জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্স এর সাথে জড়িত রয়েছে।

বায়োইনফরমেটিক্স

সংজ্ঞা: বায়োইনফরমেটিক্স হলো জীববৈজ্ঞানিক ডেটার বিশ্লেষণ। ব্যাখ্যা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য কম্পিউটার সায়েন্স, পরিসংখ্যান, এবং গণনা সংক্রান্ত পদ্ধতি ব্যবহার করতে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহার করা হয়।

প্রধান কার্যাবলী: জিনের সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ, প্রোটিন স্ট্রাকচার মডেলিং, জিন এক্সপ্রেশন ডেটা বিশ্লেষণ, এবং সিস্টেম বায়োলজি বিষয়র কাজ করা হয়।

উদ্দেশ্য: ডেটা থেকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য বের করা, রোগের গঠন বোঝা, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য মডেল তৈরি করা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

সংজ্ঞা: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো জীবিত জিনের পরিবর্তন এর  প্রক্রিয়া । যার মাধ্যমে নতুন জিন যোগ করা হয় বা বিদ্যমান জিন পরিবর্তন করা হয়।

প্রধান কার্যাবলী: জিন সংশোধন, জিন থেরাপি, GM (জেনেটিকালি মডিফাইড) ফসল ও প্রাণী তৈরি এবং বিভিন্ন জেনেটিক পদ্ধতির উন্নয়নে সাহায্য করে।

উদ্দেশ্য: নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করা, রোগের চিকিৎসা করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, এবং পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে সাহায্য করা হয়।

FAQ’S

প্রশ্নঃ  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক কে?

উঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক হলো পল বার্গ (Paul Berg) । ১৯৭২ সালে  পল বার্গ প্রথমবার মতো  জিন ক্লোনিং প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন।

প্রশ্নঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অপর নাম কি?

উঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অপর নাম হলো জেনেটিক মডিফিকেশন (Genetic Modification)

প্রশ্নঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

উঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো  বিজ্ঞান এর একটি শাখা । জিনের গঠন এবং কার্যপ্রণালী পরিবর্তন , জীবন্ত প্রাণী, উদ্ভিদ, বা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য সংশোধন করে এবং নতুন কার্যকরী জিন তৈরি করে।

প্রশ্নঃজিন প্রকৌশল কি ?

উঃ জিন প্রকৌশল (Genetic Engineering) হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শাখা। জিন প্রকৌশলে জিন বা ডিএনএ-র গঠন পরিবর্তন করা হয়।জিন পদ্ধতিতে জীবের জিনোমের কিছু অংশ কেটে নতুন জিন যুক্ত, মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা হয়। যা জীবের বৈশিষ্ট্য কে পরিবর্তন করে।জিন প্রকৌশল বিশেষ করে কৃষি, চিকিৎসা ও জীবপ্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়।

শেষ কথা

আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে আপনি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়ে ধারণা লাভ করতে পারবেন। এবং আর্টিকেল টি আপনার উপকৃত হবে।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *