প্যাসিভ ইনকাম কীভাবে করবেন? প্যাসিভ ইনকাম করার ৭ টি উপায়
বর্তমান সময়ে অনলাইন থেকে ইনকাম করা এখন পরিচিত মাধ্যম। সবাই চাই তার চাকরি / পড়াশোনা ইত্যাদির পাশাপাশি একটি আয়ের উৎস যাতে থাকে।
প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন একটি আয়ের উৎস । মূল যে কাজ করতে হয় কিংবা মূল কাজে যে সময় দিতে হয়, প্যাসিভ ইনকাম এ মূল কাজের মতো কাজ কিংবা সময় দিতে হবে না।
প্যাসিভ ইনকাম সঠিক ভাবে করতে পারলে মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। তাই আজকাল বেশির ভাগই প্যাসিভ ইনকাম করতে আগ্রহী।
বিশেষ করে যারা স্টুডেন্ট তাদের জন্য প্যাসিভ ইনকাম একটি ভালো দিক। বিশ্বের জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্যাসিভ ইনকাম এর অনেক সেক্টর রয়েছে। যার থেকে অনেই প্যাসিভ ইনকাম করছে এবং হাজার হাজার টাকা আয় করছে।
এই ব্লগে আমরা জানাবো, প্যাসিভ ইনকাম কী? প্যাসিভ ইনকাম কীভাবে শুরু করবেন?প্যাসিভ ইনকাম করার ১০টি উপায়। আশা করি এই ১০ টি উপায় দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
Table of Contents
প্যাসিভ ইনকাম কী?
প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন আয়ের উৎস। যাতে আপনি নির্দিষ্ট সময় কাজ না করেই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আপনি যদি সঠিক ভাবে কাজ করেন তাহলে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ধরুন, আপনি একজন শিক্ষক। আপনাকে দিনে ৫/৬ ঘন্টা শিক্ষকতা করে মাস শেষে কিছু পরিণাম অর্থ উপার্জন করেন। এটি হচ্ছে আপনার এক্টিভ ইনকাম। এর পাশাপাশি আপনি যদি ছোট খাটো কাজ করেন তাহলে এটি আপনার প্যাসিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকাম কেমন হয়? উদাহরণ: আপনি কত গুলো ডিজাইন তৈরি করে মাইক্রোস্টোক সাইট বা আরো যখন অন্যান্য সাইটে আপলোড করে রাখলেন। সারা বছর যে কোনো সময় আপনার কাছ থেকে অন্য কেউ একই প্রজেক্ট বার বার কিনতে পারবে। এটি কে প্যাসিভ ইনকাম বলে।
প্যাসিভ ইনকাম কত প্রকার ও কী কী?
প্যাসিভ ইনকাম মূলত ২ প্রকার। যথা:
১) রিয়েল প্যাসিভ ইনকাম
রিয়েল প্যাসিভ ইনকাম বলতে শারীরিক সম্পওি দ্বারা কাজ করা কে বুঝায় । যেমন: কোনো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে রিয়েল এস্টেট বা মালিকানা করে।
২) ভার্চুয়াল প্যাসিব ইনকাম
ভার্চুয়াল প্যাসিভ ইনকাম বলতে ভিজিটারল সম্পওি দ্বারা কাজ কে বুঝায়। যেমন: ওয়েবসাইটে বা ব্লগ লিখে।
প্যাসিভ ইনকাম কেন প্রয়োজন?
কোনো কাজ করাই সহজ নয়। প্যাসিভ ইনকাম করা ও এত সহজ নয় , তবে প্যাসিভ ইনকাম করার সুবিধা আছে ( প্রতিমাসে প্যাসিভ ইনকাম এর মাধ্যমে এক্সট্রা টাকা আয় হয়)। এতে আপনাকে সারাজীবন ধরে কষ্ট করতে হবেনা। একবার করলে সারাজীবন ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে দ্রুতগতির জীবনে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্যাসিভ ইনকাম এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্যাসিভ ইনকাম আপনার ভবিষ্যতের জন্য একটি সুফল দিক।
আরো পড়ুন : মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা ইনকাম করার উপায়
কীভাবে অনলাইনে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করবেন?
আশাকরি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে,প্যাসিভ ইনকাম কী , কত প্রকার, কেন প্রয়োজন, বুঝতে পেরেছেন। এখন কথা হলো আপনি কীভাবে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করবেন? প্যাসিভ ইনকাম করার নানা ধরনের উপায় রয়েছে।
তাঁর মধ্যে ৭ টি উপায় আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো । আপনি যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারেন, তাহলে আপনি প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট পরিমান এর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
১)অনলাইনে ডিজাইন বিক্রি করে
২)ব্লগিং করে
৩)গ্ৰাফিক্স ডিজাইন করে
৪)ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করে
৫)ভিডিও (ফেসবুক, ইউটিউব) তৈরি করে
৬)অ্যাপ তৈরি করে
৭)Animation Cartoon তৈরি করে
অনলাইনে ডিজাইন বিক্রি করে
আপনি যদি একজন গ্ৰাফিক্স ডিজাইনার অথবা ওয়েবসাইট ডিজাইনার হন । তা হলে অনলাইন বিভিন্ন সাইটে আপলোড করে ডিজাইন অথবা Template বিক্রি করতে পারেন। মাইক্রোস্টোক সাইটে ও আপনি আপনার ডিজাইন বিক্রি করতে পারেন।
মাইক্রোস্টোক সাইটে ডিজাইন ও Template আপলোড করা হয়। যাদের পছন্দ হয় তারা নির্দিষ্ট পরিমান ডলার দিয়ে কিনে নেয়। একটি ডিজাইন ও Template অনেকেই কিনতে পারে। এটি একটি বড় সুবিধা প্যাসিভ ইনকাম এর।
ব্লগিং করে
ব্লগিং হচ্ছে বর্তমান সময়ের প্যাসিভ ইনকাম এর জনপ্রিয় মাধ্যম। ব্লগিং করে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
ব্লগ ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল বা নিশ নিয়ে আর্টিকেল লিখা লিখি করতে পারেন। যেমন: ভ্রমন, মজা, টিপস, পড়ালেখা,হেলথ কেয়ার, ইত্যাদি বিষয়ের উপর লিখা লিখি করতে পারেন।
ব্লগিং করে কীভাবে ইনকাম করবেন ? ব্লগিং এর প্রধান ইনকাম এর উপায় হচ্ছে গুগল এডসেন্স। এছাড়াও অন্যান্য এডসেন্স দিয়ে, স্পন্সর করে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ,নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে,সদস্যপদ করে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
বলে রাখা ভালো, ব্লগিং করে দ্রুত প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব নয়। তার জন্য বেশি পরিশ্রম করতে হবে। তবে একটা সময়ে এসে আপনি ভালো সুফল পাবেন।
আরো পড়ুন : ব্লগিং কি ? ব্লগিং কিভাবে শুরু করবো
গ্ৰাফিক্স ডিজাইন করে
বর্তমান সময়ে গ্ৰাফিক্স ডিজাইনএর চাহিদা অপরিহার্য।
এতে দক্ষ থাকা অত্যন্ত ভালো। আপনি যদি গ্ৰাফিক্স ডিজাইন এ দক্ষ হন , তাহলে আপনি অনলাইন থেকে বিভিন্ন উপায়ে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
কীভাবে গ্ৰাফিক্স ডিজাইন করে ইনকাম করবেন? স্টক ডিজাইন বিক্রি করতে পারেন। iStock, Adobe Stock, Shutterstock ইত্যাদি সাইটে লোগো, আইকন, ভেক্টর গ্ৰাফিক্স ডিজাইন, গ্ৰাফিক্স ডিজাইন এর ছবি,গ্ৰাফিক্স ডিজাইন এর বিভিন্ন টেমপ্লেট বিক্রি করতে পারেন।
এছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে ব্লগ পোস্ট লিখে অ্যাডসেন্স, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। গ্ৰাফিক্স ডিজাইন এর প্রতিযোগিতা বেশি তাই আপনাকে ভালোমানের Products ডিজাইন করতে হবে।
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করে
মার্কেটিং এর জন্য ইনস্টাগ্রাম একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম । ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।পুরো বিশ্বে ইনস্টাগ্রাম এর ব্যবহারকারী প্রায় ২ বিলিয়ন। ইনস্টাগ্রামে এ নানা ধরনের ব্র্যন্ড, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, কম্পানি মার্কেটিং করছে।
ইনস্টাগ্রামে মার্কেটিং করার জন্য আপনার একটি প্রফেশনাল ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থাকতে হবে। আপনি এই একাউন্ট বিভিন্ন ধরনের ব্র্যন্ড, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, কম্পানি মার্কেটিং গুলোর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং,ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর,নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে ইনস্টাগ্রাম থেকে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
ভিডিও (ফেসবুক, ইউটিউব) তৈরি করে
আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হন তাহলে আপনি ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। বর্তমান সময়ে ভিডিও তৈরি করে প্যাসিভ ইনকাম প্রায় সকলে করছে।
আপনি যেকোন বিষয়ে নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন যেমন: নাটক, এনিমেশন, টেকনিক্যাল, ইত্যাদি।
আরো পড়ুন : প্রফেশনাল ভাবে ইউটিউব ভিডিও তৈরি ( ফুল গাইড)
ভিডিও তৈরি করে আপনি ফেসবুক ইউটিউবে আপলোড করলে। আপনার ভিডিও ভিউস হলে ভিডিও ভিউস অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে আপনাকে প্রথমে মনিটাইজেশন পেতে হবে।
আরো পড়ুন : কিভাবে ইউটিউব থেকে ইনকাম করা যায়
অ্যাপ তৈরি করে
অ্যাপ একটি পরিচিত শব্দ। আমরা সকলেই অ্যাপ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকি। আপনি যদি অ্যাপ ডেভেলপার হন। তাহলে আপনি অ্যাপ তৈরি করে Play Store আপলোড করতে পারেন।
Play Store থেকে প্রতিদিনই অনেক অনেক অ্যাপ ডাউনলোড করা হচ্ছে। আপনার তৈরি অ্যাপটি যদি ডাউনলোড করা হয় তাহলে আপনি অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
Animation Cartoon তৈরি করে
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে, টিভি চ্যানেল, ইউটিউব, ফেসবুক বিজ্ঞাপন সহ নানার ক্ষেত্রে Animation ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে Animation এর চাহিদা প্রচুর এবং এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
ইউটিউব ও ফেসবুকে Animation এর অনেক চ্যানেল রয়েছে । যারাAnimation দিয়ে Cartoon তৈরি করে অনেক টাকা ইনকাম করছে।
আপনি যদি প্রফেশনাল ভাবে Animation শিখতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে ভিডিও তৈরি করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
FAQ’S
প্রশ্নঃ প্যাসিভ ইনকাম কি ?
উঃ প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) হলো এমন একটি আয়ের মাধ্যম যেখানে আপনি কিছু সময় কাজ করে ভবিষ্যতে তার থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যেমন: ব্লগিং, ইউটিউব চ্যানেল, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা ডিজিটাল পণ্য । আপনি একবার সঠিকভাবে কাজ করলে ভবিষ্যতে কম পরিশ্রমে আয়ের সুযোগ তৈরি করে তুলে প্যাসিভ ইনকাম।
প্রশ্নঃ প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায়
উঃ প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমন : রিয়েল এস্টেট, শেয়ার মার্কেট, ব্লগিং, ইউটিউব, ডিজিটাল পণ্য বিক্রি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ক্রাউডফান্ডিং বা ড্রপশিপিংয়ের । উপরোক্ত যেকোনো কাজের মাধ্যমে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া
উঃ প্যাসিভ ইনকাম করার কিছু আইডিয়া:
• ই-বুক প্রকাশ: একবার লিখলে দীর্ঘমেয়াদে বিক্রি করা যাবে।
• অনলাইন কোর্স: বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিখিয়ে কোর্স বিক্রি করা।
• অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: অন্যর পণ্য প্রচারে করে অর্থ উপার্জন ।
• ড্রপশিপিং: কোনো প্রকার ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া পন্য বিক্রি।
• ইউটিউব/ব্লগ: কনটেন্ট তৈরি করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করা ।
প্রশ্নঃ ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে
উঃ ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার ৭টি উপায় হলো:
১)অনলাইনে ডিজাইন বিক্রি করে
২)ব্লগিং করে
৩)গ্ৰাফিক্স ডিজাইন করে
৪)ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করে
৫)ভিডিও (ফেসবুক, ইউটিউব) তৈরি করে
৬)অ্যাপ তৈরি করে
৭)Animation Cartoon তৈরি করে
শেষ কথা
প্যাসিভ ইনকাম করতে প্রথমে আপনাকে কাজ অনেক অনেক সময় দিতে হবে। কাজটি আপনাকে প্রফেশনাল ভাবে করতে হবে। মনে রাখবেন কোনো কাজ করাই সহজ নয়। প্যাসিভ ইনকাম ও তেমন। আপনি যদি প্রথমে ভালো ভাবে কাজ করেন তাহলে একটা সময়ে এসে আপনি ভালো সুফল পাবেন। আশাকরি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে প্যাসিভ ইনকাম নিয়ে আপনার আর কোনো সমস্যা হবে না।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ।