সহজে ব্যাংক একাউন্ট কীভাবে খুলবেন?

সহজে ব্যাংক একাউন্ট কীভাবে খুলবেন?

আপনি যে কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকেন না কেন, বর্তমান সময়ে আপনার ব্যাংক একাউন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে কীভাবে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন, একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কী কী প্রয়োজন, কত বছর বয়সে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন, এসব বিষয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

Table of Contents

কত বছর বয়সে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন

প্রতিটি দেশের ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি আর্থিক কতৃপক্ষ নির্দেশ করে দেন। এই নির্দেশ অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনা করা হয়। মূলত প্রায় সব দেশেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সের হতে হয়। তবে কিছু দেশে ১৬ বছর বয়সে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। বাংলাদেশে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গ্ৰাহক কে ১৮ বছর বয়সের হতে হবে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

বাংলাদেশের ব্যাংক সাধারণ ২ শ্রেনির:

১) তালিকাভুক্ত : ৬ টি রাষ্ট্রীয় বানিজ্যিক ব্যাংক, ৪৩ টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৯ টি বিদেশি ব্যাংক, ৩ টি বিশেষায়িত ব্যাংক, মোট ৬১ টি তালিকাভুক্ত ব্যাংক বাংলাদেশে রয়েছে।

২) অ-তালিকাভুক্ত : জুবিলী ব্যাংক,আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক,গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক , মোট ৫টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক বাংলাদেশে রয়েছে।

তবে বলে রাখা ভালো, তালিকাভুক্ত ব্যাংক সমূহ তফসিল প্রাপ্ত (একাউন্ট খোলা উত্তম ) এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক সমূহ তফসিল প্রাপ্ত নয়।

ব্যাংক একাউন্ট ফর্ম

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রথম শর্ত ফর্ম পূরণ করা। সাধারণত বাংলাদেশের ব্যাংক গুলো ২ ধরনের ফর্ম  এর সার্ভিস দিয়ে থাকে:

১) ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম

২) প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম

ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম

এই একাউন্ট টি মূলত নিজস্ব কাজে ব্যবহার করা হয়।

ব্যক্তিগত একাউন্ট এ নিজস্ব অর্থ/বেতন/আয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।(ফর্ম এর টাইটেল বা শিরোনাম এ নিজ নাম লেখতে হবে) ব্যক্তিগত একাউন্ট আপনার নিয়মিত খরচ কভার করতে পারেন। অথবা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সাথে সংযুক্ত রাখতে পারেন যা আপনি দৈনিক কাজে ব্যয় করতে পারেন।

প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম

এই একাউন্ট টি মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই একাউন্ট গুলো অব্যাক্তিগত হিসেবে গণ্য করা হয়।(ফর্ম এর টাইটেল বা শিরোনাম এ প্রাতিষ্ঠানিক/ব্যবসার নাম লিখতে হবে)।

ব্যাংক একাউন্টের ধরন

বাংলাদেশ বিভিন্ন একাউন্টের ধরন রয়েছে। ৪টি একাউন্ট সাধারণত বেশি প্রচলিত এবং প্রত্যেক গ্ৰাহক এই ৪টি একাউন্ট করে থাকে ।

ব্যাংক একাউন্টের ধরন

একাউন্ট গুলো হলো:

১) চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট

চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য করা হয়। এই একাউন্ট এ যত  প্রয়োজন টাকা তুলতে পারবেন , টাকা জমা রাখতে পারেন বা টাকা লেনদেন করতে পারেন ।

  • এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কোনো প্রকার সুদ প্রদান করেন না ।
  • তবে বছর শেষে কিছু পরিণাম অর্থ চার্জ কেটে নেই।
  • বিশেষ পেশায় নিয়োজিত লোকজন (যেমন: আইনজীবী, ডাক্তার, ব্যবসায়ী,ফ্রিল্যান্সার, ইত্যাদি) চাইলে কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারেন।

২) সঞ্চয়ি হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট

মূলত যাদের  সবসময় অর্থ লেনদেনের প্রয়োজন হয় না , তারা সঞ্চয়ি হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট করে থাকে(যে কেউ এই ধরনের একাউন্ট খুলতে পারবেন)।

সপ্তাহে ১/২ বার টাকা জমা দিতে পারবেন এবং তোলতে ও পারবেন ‌। জমাকৃত টাকা থেকে ৫% বা ৭% টাকা সুদ প্রদান করা হয়। তবে এই সুদের হার বিভিন্ন ভেদে কম বেশি হতে পারে।

সেভিংস একাউন্ট আপনার অর্থ  নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে (আপনার পরিশ্রমের অর্থ অরক্ষিত ভাবে বয়ে বেড়াতে হবে না )।

এক্ষেত্রে ব্যাংক অনুযায়ী সেভিংস একাউন্ট এর ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান , এ ব্যাংকে যোগাযোগ করলে তারা আপনাকে ক্যাটাগরি সাজেস্ট করবে (কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে)।

৩) ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম একাউন্ট)

আপনি যদি কোনো ব্যাংকে অর্থ জমাতে বা সঞ্চয় করতে চান , তাহলে এই অর্থ সঞ্চয় বা জমানো কে সংক্ষেপে ডিপিএস বলে।

আপনার মাসিক ব্যয়  বাবদ যতটুকু আমানত থাকে তা আপনি ডিপিএস করে রাখতে পারেন। সঞ্চয় এর উদ্দেশ্য ডিপিএস ব্যবহার করা হয়।

আপনি এটি আপনার বা প্রতিষ্ঠানের নামে করতে পারেন। এটি ৫ বছর বা ১০/১৫  বছর  মেয়াদী হয়।

৫ বছর এর জন্য ১০% ও ১০/১৫ বছর এর জন্য ১৫% বার্ষিক সুদ দেওয়া হয় (আপনার উপর নির্ভর করে আপনি কত বছর এর জন্য ডিপিএস করবেন)।

ডিপিএস করলে প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট পরিমান এর টাকা জমা দিতে হয়,(টাকার পরিমাণ ৫০০-১০,০০০)।মাসিক কিস্তিতে দিতে হয়।

৪) এফডিআর (ফিক্স ডিপোজিট রিসোর্ট একাউন্ট)

এফডিআর হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা যা আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখতে পারেন (ভবিষ্যতের আমানত হিসেবে)। যার সুদ  মাসিক, পাক্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, বার্ষিক হিসেবে তুলতে পারেন।

ভবিষ্যতের জন্য এফডিআর খুবই ভালো। আমরা সবাই জানি ভবিষ্যতের জন্য ভাবনা একজন জ্ঞানী লোকের কাজ।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজপত্র লাগে

পূরণকৃত ব্যাংক একাউন্ট ফর্ম: ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রথম শর্তাবলী হচ্ছে আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন ঐ ব্যাংক থেকে ফর্ম নিতে হবে।

ফর্ম এর সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে, অতঃপর ফর্ম টি ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

স্পেসিমন সিগনেচার কাড: ব্যাংক একাউন্ট এর ফর্ম নিতে স্পেসিমন সিগনেচার কার্ড দিয়ে দেয়।

পরিচয় দানকারী : সাধারণত ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ঐ ব্যাংক এ একাউন্ট আছে এমন একজন পরিচয় দানকারী হবে(এটি আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব হতে পারে)।

পরিচয় দানকারী একাউন্ট নির্দিষ্ট স্থানে নমুনা সাক্ষর, একাউন্ট নাম্বার, নাম, ঠিকানা ইত্যাদি লিখে দিতে হবে।

নমনী: ব্যাংক একাউন্ট খুলতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো নমনী। আপনার অবর্তমানে বা আপনি মারা গেলে আপনি যাকে নমনী দিবেন সে আপনার জমানো অর্থ তুলতে পারবে।তাই নমনী যাকে তাকে না দিয়ে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া উওম।

সদ্য তোলা ছবি: ব্যাংক একাউন্ট এর প্রত্যেক পরিচালনাকারি ২-৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। ছবি  সদ্য তোলা হতে হবে।

টাকা জমা দেওয়া:  সবকিছু পূরণ করে একাউন্ট এর  জমা দেওয়ার স্লিপ পূরণ করে একাউন্ট চালু করে টাকা জমা দিতে হবে। আপনি যে নিয়মে একাউন্ট খুলেছেন, ঐ নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা রাখবেন।

অন্যান্য কাগজপত্র:  জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র, পরিচয়পত্র অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মসদন, NID Card, চাকরি পরিচয়পত্র ইত্যাদি।

আরো পড়ুন : নতুনদের জন্য এটিএম কার্ড ব্যবহার করার নিয়ম

প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট খুলতে অতিরিক্ত যা যা লাগবে

ব্যক্তিগত একাউন্ট বা প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট খুলার নিয়ম কিছু কিছু ভিন্ন। প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট খুলতে কিছু অতিরিক্ত কাজপএ লাগবে। অতিরিক্ত কাজপএ গুলো হলো:

  • ট্রেড লাইসেন্স
  • প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট এর মালিক ও অন্যান্য পরিচালনাকারীর স্বাক্ষর।
  • প্রত্যেক একাউন্ট এর পরিচালক এর স্বাক্ষর পদবী সহ।

উপরোক্ত তথ্য ছাড়া ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তহবিল প্রয়োজন হয়।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যে জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে

১) ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যে সব কাগজপত্র দেওয়া হয় এগুলোর মূল কপি রাখবেন।

২) একাউন্ট খোলার পর, প্রথমে আপনি চেক বই নিবেন।

৩) চেকবই তোলার জন্য ঐ দিন আবেদন করবেন।

৪) জমানো স্লিপ ও একাউন্ট নাম্বার সংরক্ষণ করবেন।

৫) ব্যাংকের ডাটাবেজে আপনার নাম ও স্বাক্ষর ঠিক আছে কিনা তা দেখবেন।

৬) ডেবিট কার্ড এর জন্য আলাদা আবেদন করবেন।

৭)‌ ফর্ম পূরণে আপনার স্বাক্ষর মনে রাখতে হবে।

FAQ’S

প্রশ্নঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট কীভাবে খুলব ?

উঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম হলো:

আপনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। তার মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চয়ি (সেভিংস ) একাউন্ট খুলার নিয়ম হলো, ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রয়োজন। যেমন: সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রয়োজনে পাসপোর্ট ফটোকপি, বিদ্যুৎ বিলের কপি, নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

সকল ডকুমেন্ট নিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তার কাছ থেকে সঞ্চয়ি (সেভিংস) একাউন্ট খোলার ফরম সংগ্রহ করে তা সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে, জমা দিতে হবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সহ।

সকল কাজ ঠিকমত হয়ে গেলে ফি প্রদান করতে হবে। পরবর্তীতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য একাউন্ট সচল হয়ে যাবে। একাউন্ট সচল হলে আপনাকে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

প্রশ্নঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?

উঃ ব্যাংক একাউন্টে খুলতে টাকার পরিমাণ ব্যাংকের ধরনের উপর নির্ভর করে। সঞ্চয়ি (সেভিংস ) একাউন্ট খোলার জন্য ৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা ( আনুমানিক ) জমা দিতে হয়।
তবে, কিছু ব্যাংকের ব্যালেন্স রাখার জন্য শর্ত থাকে।

প্রশ্নঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে ?

উঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন:

১) জাতীয় পরিচয়পত্র
২) সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
৩) পাসপোর্টের কপি ( প্রয়োজনে )
৪) নমিনির ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র
৫) বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিল
৬) ৫০০-৫০০০ টাকা ডিপোজিট

প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করব কীভাবে?

উঃ ইসলাম ব্যাংক একাউন্ট চেক :

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার জন্য 09617516259 ( ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন এই নম্বরে কল দিতে হবে)নম্বর কল দিতে হবে। কল দেওয়ার পর ক্রটি ড্রপ হয়ে যাবে। এর কিছুক্ষণ পর আপনার মোবাইল এসএমএস আসবে এসএমএস ব্যাংক একাউন্ট এর ব্যালেন্স দেওয়া থাকবে।

প্রশ্নঃ সোনালী ব্যাংক একাউন্ট চেক করব কীভাবে?

উঃ সোনালী ব্যাংক একাউন্ট চেক :

সোনালী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার জন্য 26969 নম্বরে SBL BAL (space) দিতে হবে । এরপর এসএমএসের মাধ্যমে আপনার ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স দেওয়া থাকবে।

শেষ কথা

তবে কিছু জিনিস ব্যাংক একাউন্ট খুলতে মাথায় রাখা ভালো যেমন: ব্যাংকের শাখা থেকে আপনার কর্ম স্থান বা বাসার দুরুত্ব, অনলাইন সুবিধা,কার্ড সুবিধা ইত্যাদি

আশা করি,এই ব্লগ পড়ে আপনার আর কোনো ভয় কাজ করবে না ব্যাংক একাউন্ট খুলতে। আপনি এখন আপনার পছন্দের ব্যাংকে আপনার সুবিধা মতো একাউন্ট খুলতে পারবেন।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *