মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ

বর্তমান সময়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে স্বপ্নের ক্যারিয়ার। এ পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি জাহাজে কাজের সুযোগ থাকে। এ কাজের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করার পাশাপাশি ভালো আয়ও করা যায়।

একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে দক্ষ নাবিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন খাতে কাজ করে, ভালো টাকা উপার্জন করা যায়।

আধুনিক সময়ে সমুদ্র ভ্রমণের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার গুরুত্বও বাড়ছে।

আজকে এই আর্টিকেল আমরা জানবো মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি? মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ, ইত্যাদি।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং হলো ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি শাখা, যেখানে জাহাজ, সাবমেরিনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক যানবাহনের নকশা, তৈরি, মেরামত ও দেখভালের কাজ করা হয়।

এই শাখায় জাহাজের ইঞ্জিন, মেশিন, বৈদ্যুতিক কানেকশন ও অন্যান্য যন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং ত্রুটি মুক্ত কি না, এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মূল কাজ হলো সামুদ্রিক যানবাহনকে আরও সেফ রাখা, ত্রুটি মুক্ত রাখা এবং যেনো ভালো ভাবে কাজ করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখা।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক কে?

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক হলো রবার্ট নেপিয়ার (Robert Napier) । তিনি ১৮০০-এর দশকে স্টিম ইঞ্জিনকে আরও বেশি উন্নত করেন, যা ছোট স্টিমবোট থেকে শুরু করে বড় সমুদ্রযাত্রার জাহাজেও ব্যবহার হয়।

তার তৈরি ইঞ্জিনগুলো ব্রিটিশ র‍য়াল নেভি এবং কুনার্ড লাইনারের জাহাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বড় অবদান রেখেছিল।

রবার্ট নেপিয়ার (Robert Napier) অবদানের জন্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুন এক সূচনা হয়। তাই রবার্ট নেপিয়ার (Robert Napier) কে Father of Marine Engineering বলা হয়।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি?

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হলো জাহাজ, সাবমেরিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক যন্ত্র ডিজাইন করা, তৈরি করা, চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা এসব যানবাহন সঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং ত্রুটি মুক্ত কি না, তা নিশ্চিত করেন এবং এসব যন্ত্র দেখাশোনা করেন।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল কাজ গুলো হলো:

মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা জাহাজের ইঞ্জিন ও প্রোপেলারের সাহায্যে জাহাজকে সঠিক গতিতে চালিয়ে নেন। প্রপালশন সিস্টেমে ইঞ্জিন, টারবাইন এবং প্রোপেলার একসাথে কাজ করে।

ইঞ্জিনের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা নিয়মিত ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতির দেখভাল করেন। তারা যেকোনো যান্ত্রিক সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করে এবং এর সমাধান করেন।

জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে আগুনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে জাহাজের সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করা, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

জাহাজের বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা নিয়মিত নজরদারি এবং মেরামত করেন।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সামুদ্রিক যানবাহনের উপর।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর যা যা দক্ষতা থাকা প্রয়োজন:

মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা  বিভিন্ন মেশিন এবং ইঞ্জিন সিস্টেম সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকা অবশ্যই জরুরি। ইঞ্জিন, প্রপালশন সিস্টেম এবং অন্যান্য যন্ত্রের এর বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে ও জানতে হবে এবং এগুলোর কাজ কি, কিভাবে কাজ করে এসব বিষয় ও অবশ্যই জানতে হবে।

আধুনিক জাহাজ গুলোতে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, সার্কিট এবং কন্ট্রোল সিস্টেম সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ধারণা থাকতে হবে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের যেকোনো ত্রুটি বা যান্ত্রিক সমস্যা দ্রুত সমাধান করার দক্ষতা থাকতে হয়। সমুদ্রে অনেক সময় সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হয়।

একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ার যোগ্যতা নির্ভর করে সম্পূর্ণ পড়ার উপর। আপনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং দুই ভাবে পড়তে পারবেন। এইচএসসি পাশ করার পর ও এসএসসি পাস করার পর।

এইচএসসি (HSC) পাশ করার পর

এইচএসসি পরীক্ষায় আপনাকে বিজ্ঞান (সাইন্স) বিভাগ থেকে ভালো পয়েন্ট পেয়ে পাস করতে হবে। বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও গনিতে ভালো নম্বর পেতে হবে।

এইচএসসি পাশ করার পর আপনাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। আপনি সরকারি – বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে পারবেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য এইচএসসি পরীক্ষায় আপনাকে ৫.০০ পয়েন্ট (GPA 5) পেতে হবে।

এসএসসি (SSC) পাশ করে

এসএসসি পরিক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে হবে। বিশেষ করে গনিতে, আপনি জেনারেল বা ভোকেশনাল যেকোনো একটি থেকে এসএসসি পাস করলেই হবে।

এসএসসি পাশ করার পর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য আপনাকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে।

ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য আপনি সরকারি বা বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর পড়ালেখা করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কী ? কিভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হবেন‌

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ার যোগ্যতা নির্ভর করে আপনি কোন‌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান । যেমন: সরকারি নাকি বেসরকারি।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য খরচ খুব কম হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ১,০০,০০০ টাকার মত কিছু কম বেশি খরচ হতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি খরচ হয়।

আসলে সঠিক পরিমাণ খরচ কেমন হবে, আপনি পড়ার তা নিজেই বুঝতে পারবেন।

আর আপনি যদি ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। ডিপ্লোমা পড়ার খরচ একটু কম। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পড়তে প্রত্যেক সেমিস্টারে ফি , পরিক্ষা ফি ও বই কিনার খরচ ।

  • সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট= প্রত্যেক সেমিস্টার ও বই ফি (২১০০ ও ১৩০০)
  • বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট= প্রত্যেক সেমিস্টারে ও বই ফি (১২০০০ ও ১৩০০)
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন কত

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন কত?

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন বিভিন্ন পর্যায় ও কাজের উপর নির্ভর করে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন হলো:

প্রথম পর্যায়: ২০-২৫ হাজার

৫-১০ বছর অভিজ্ঞতা পর : ৫০-১০০০০০ টাকা

ক্যাপ্টেন বা চিফ ইঞ্জিনিয়ার: ২-৩ লক্ষ টাকা

তবে, আন্তর্জাতিক ভাবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ করলে আপনার বেতন অনেক হবে।

আমার বিভিন্ন সোর্স থেকে বেতন কত হবে তা অনুমান করেছি, তবে পুরোপুরি সিউর হয়ে বলতে পারবো না। কারণ যে এই সেক্টর এ কাজ করে, তিনি এই বিষয়ে কাজ করতে করতে ভালো বুঝতে পারবেন, কত টাকা বেতন হতে পারে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কুলার

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর সার্কুলার ভর্তি হওয়ার জন্য বাংলাদেশে সার্কুলার এর বিভিন্ন ভর্তি নির্দেশনা আছে। যেমন:

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী: ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডেট কোর্সের ভর্তির জন্য SSC ও HSC এর রেজাল্ট এর উপর ভিত্ত করে  আবেদনকারীদের বাছাই করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে ৫০% লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে এবং এরপর আবেদনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Health Test) ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।

চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি:  চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমী আবেদনকারিদের মধ্যে ৫০% লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বাছাই করা হবে। মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সুযোগ থাকে। এই কোর্সের জন্য আনুমানিক খরচ প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকা।

সরকারি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কয়টি?

বাংলাদেশে সরকারি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হলো :

1. চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি

2. বরিশাল মেরিন একাডেমি

3. পাবনা মেরিন একাডেমি

4. রংপুর মেরিন একাডেমি

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

বাংলাদেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হলো:

1. বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি

2. বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজি (BIMT)

3. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (BUET) – নেভাল আর্কিটেকচার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

4. কাপ্তাই মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট

5. বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি

6. খুলনা শিপইয়ার্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট

7. চট্টগ্রাম মেরিন ইনস্টিটিউট

8. নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ – মেরিন টেকনোলজি বিভাগ

FAQ’S

প্রশ্নঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

উঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং হলো ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি শাখা, যেখানে জাহাজ, সাবমেরিনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক যানবাহনের নকশা, তৈরি, মেরামত ও দেখভালের কাজ করা হয়।ক্ষণাবেক্ষণ , তৈরি উপর ভিত্তি করার অন্যতম প্রধান একটি ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা।

প্রশ্নঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক কে?

উঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক হলো রবার্ট নেপিয়ার (Robert Napier) ।

প্রশ্নঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সরকারি কলেজ কয়টি?

উঃ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সরকারি কলেজ হলো:
1. চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি
2. বরিশাল মেরিন একাডেমি
3. পাবনা মেরিন একাডেমি
4. রংপুর মেরিন একাডেমি

শেষ কথা

আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে আপনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে জানতে পারবেন ও ধারণা লাভ করতে পারবেন ।

উপরোক্ত আর্টিকেল মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাকে অনেক হেল্প করেছে, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে জানার জন্য।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *