সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি এবং প্রয়োজনীয়তা ও ক্যারিয়ার
বর্তমান সময়ের সাথে প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সফটওয়্যার জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বিশেষ করে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ ,হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমেইল (জিমেইল, ইয়াহু মেইল), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব,মাইক্রোসফট অফিস (ওয়ার্ড, এক্সেল), গুগল ডকস, স্ল্যাক, জুম ইত্যাদি।
আমার দৈনন্দিন জীবনে যেকোনো কাজে এই ধরনের সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করে থাকি। বর্তমান সময়ে হচ্ছে আধুনিক বা প্রযুক্তির যুগ। আর এই প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ও কম্পিউটার অন্যতম।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ধরনের কাজ রয়েছে যেগুলো মোবাইল ও কম্পিউটার মাধ্যমে করার ফলে তাড়াতাড়ি ও সুবিধা মতো করা যায়। যেমন: অনলাইন শপিং, অফিসের কাজ, অনলাইন অর্ডার বা ডেলিভারি, অনলাইন চিকিৎসা, অনলাইন ক্লাস ইত্যাদি।
আমরা সুবিধা ও কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সফটওয়্যার মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যবহার করে থাকি। আর এই সফটওয়্যার গুলো যারা তৈরি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার কাজ করে তাদের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়। আর এই সফটওয়্যার গুলো তৈরি প্রক্রিয়া, নিয়ম ও পদ্ধতি কে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়।
উদাহরণ,আমরা সকলেই কমবেশি ফেসবুক এর সাথে পরিচিত। ফেসবুক হচ্ছে একটি সফটওয়্যার। মার্ক জাকারবার্গ, এডুয়ার্ডো সাভেরিন, অ্যান্ড্রু ম্যাককলাম, এবং ডাস্টিন মস্কোভিটস মিলে ফেসবুক তৈরি করেন। তারা সকলেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।ফেসবুক সফটওয়্যার তৈরি করার সময় কোডিং বা প্রোগ্রামিং, ফিচার , ডাটাবেজ, ফ্রেমওয়ার্ক ও লাইব্রেরী এবং ফেসবুক তৈরি করার প্রক্রিয়াকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বলে।
আজকে এই আর্টিকেলে, আমরা জানবো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি? সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা ও খরচ, ইত্যাদি।
Table of Contents
সফটওয়্যার কি?
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি জানার আগে আমাদের আগে জানতে বা বুঝতে হবে সফটওয়্যার কি? সফটওয়্যার হচ্ছে প্রোগ্রাম বা ডিজিটাল ইন্সট্রাকশন। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস এর কাজ সম্পন্ন করা হয়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সফটওয়্যার হচ্ছে এমন একধরনের প্রোগ্রাম যা কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের হার্ডওয়্যার (হার্ডওয়্যার যেমন :প্রসেসর (সিপিইউ), মেমোরি (RAM), হার্ড ড্রাইভ, মাউস ও কীবোর্ড, মনিটর,প্রিন্টার) কীভাবে কাজ করবে তা নির্দেশ করে।
হার্ডওয়্যারকে সফটওয়্যার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সফটওয়্যার মূলত কোড বা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে তৈরি করা হয়। সফটওয়্যার সকল ডিভাইসের জন্য তৈরি করা হয়। যেমন: কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস।
সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি?
সফটওয়্যার প্রধানত দুই প্রকার। যথা,
১. সিস্টেম সফটওয়্যার : কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এর নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। উদাহরণসরূপ – অপারেটিং সিস্টেম (যেমন, Windows, Linux), ড্রাইভার, ইউটিলিটি সফটওয়্যার ইত্যাদি।
২. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার : কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস এর কাজ ( টেক্সট প্রসেসিং, ডাটা ম্যানেজমেন্ট) সম্পন্ন করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় । উদাহরণস্বরূপ – Excel, Microsoft Word, Photoshop, Browser ইত্যাদি ।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর প্রযুক্তিগত শাখা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল কাজ হলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন, উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা।
সহজেই ভাবে বলতে গেলে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা যেখানে সফটওয়্যার তৈরি, ডিজাইন, কোডিং বা প্রোগ্রামিং, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সফটওয়্যার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়। একটি সফটওয়্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে তৈরি করা হবে তা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পরিকল্পনা করা হয়।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে হাই কোয়ালিটির, নির্ভর ও ব্যবহার যোগ্য এবং আধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করা সম্ভব। যা কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ব্যবহার করা যায়।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রোগ্রামিং, ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম, সফটওয়্যার ডিজাইন এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন হয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু কোডিং নয় বরং সফটওয়্যার তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি পরিকল্পনা ও নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়। যা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল (SDLC) নামে পরিচিত।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল (SDLC)
একটি সফটওয়্যার তৈরি করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং যাবতীয় কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ এর নিয়ম কে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল (SDLC) বলা হয়। সহজ ভাবে, সফটওয়্যার লাইফ সাইকেল (SDLC) হচ্ছে সফটওয়্যার তৈরি করার স্ট্রাকচার্ড বা নিয়ম।
SDLC এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Software Development Life Cycle অর্থাৎ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল। SDLC এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে হাই কোয়ালিটির ও ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি করা ।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল (SDLC) এর ধাপ গুলো হলো:
- পরিকল্পনা (Planning)
- প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ (Requirement Analysis)
- ডিজাইন (Design)
- টেস্টিং (Testing)
- বাস্তবায়ন (Deployment)
- রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance)
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি?
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজের ভেতরে বিভিন্ন ধরণের কাজ করা হয়। যেমন – সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা ইত্যাদি। এছাড়াও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। যেমন:
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা নতুন অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম তৈরি করে। যা সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।
আগের সফটওয়্যার সিস্টেম গুলোর আপগ্রেড করা এবং সমস্যা সমাধান করতে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হয়, যাতে সফটওয়্যার আধুনিক মডেল এর হয়, কার্যকর থাকে এবং ব্যবহার যোগ্য থাকে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা সফটওয়্যার পরীক্ষা করে এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী তা আপগ্রেড করেন।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিম ম্যানেজমেন্ট করা, ইত্যাদি
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হতে কি কি দক্ষতা প্রয়োজন?
একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হতে অনেক দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এই দক্ষতা গুলো থাকলে একজন সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। দক্ষতা গুলো একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে সমস্যার সমাধান করা, দক্ষভাবে কোডিং করা এবং টিমের কাজে সাহায্য করতে প্রয়োজন।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হতে যে যে দক্ষতা গুলো প্রয়োজন:
- প্রোগ্রামিং দক্ষতা ( Python, Java, C++, JavaScript)
- অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচার
- ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট
- কমিউনিকেশন স্কিল
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- ডিবাগিং এবং টেস্টিং
এছাড়াও আরো কিছু দক্ষতা রয়েছে, যেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী দরকার হয়। এই দক্ষতা গুলো থাকলে একজন সফল ও দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হওয়া যায়।
- সিস্টেম ডিজাইন
- API ডিজাইন এবং ইন্টিগ্রেশন
- ক্লাউড কম্পিউটিং
- ভার্সন কন্ট্রোল
- নেটওয়ার্কিং এবং সিকিউরিটি
- ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ডিজাইন
- অটোমেশন এবং স্ক্রিপ্টিং
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সফটওয়্যার এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে সফটওয়্যার এর ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাংক, শপিং যোগাযোগ, চিকিৎসা ,বিনোদন ও বিভিন্ন কাজের জন্য।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শুধুমাত্র সফটওয়্যার তৈরি ও পরিচালনার জন্য নয় বরং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নত মানের, এবং ব্যবহারযোগী সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরি করার জন্যও অনেক প্রয়োজনীয়।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু প্রয়োজনীয়তা হলো:
- সফটওয়্যারের গুণগত মান বজায় রাখা।
- জটিল সমস্যার সমাধান করা।
- সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণ করা। ইত্যাদি
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন
একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: অভিজ্ঞতা,দক্ষতা, কোম্পানি ইত্যাদির উপর। তবে বিভিন্ন দেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন বিভিন্ন ধরনের হয়।
বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন
জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার : ২৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা।
মিড-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার : ৬০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা।
সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার : ১,৫০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা।
টেক লিড/প্রজেক্ট ম্যানেজার : ২,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা।
উপরের দেওয়া সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেতন কম বা বেশি হতে পারে, তা নির্ভর করে কোম্পানির ধরন ও প্রজেক্ট স্কেল অনুযায়ী।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন
যুক্তরাষ্ট্র : জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বছরে গড়ে ৭০,০০০ থেকে ৯০,০০০ ডলার বেতন পায়। সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন সাধারণত ১,২০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
ইউরোপ: ইউরোপের দেশ গুলোতে গড় বেতন বছরে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ ইউরো হতে পারে, যা কোম্পানির ওপর নির্ভর করে।
কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া: একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের গড় বার্ষিক বেতন ৮০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ কানাডিয়ান ডলার বা অস্ট্রেলিয়ান ডলার হতে পারে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে এসএসসি ও এইচএসসি যে ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে হবে এবং ভালো রেজাল্ট এচিভ করতে হবে। তার জন্য আপনাকে সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্ট হতে হবে।
চলুন জেনে নিই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা:
উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বা কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হতে হলে সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি শিক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
• সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় GPA ভালো পেতে হবে। জিপিএ H.H.C ও
SSC মিলিয়ে ৯.৫ বা এর বেশি থাকতে হবে।
• অবশ্যই সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্ট হতে হবে।
• ম্যাথ ও হায়ার ম্যাথ ভালো নম্বর পেতে হবে।
• সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তির পরীক্ষা দিতে হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ডিপ্লোমা পড়তে পারবেন। ডিপ্লোমা ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা হলো:
• এসএসসি পাস করতে হবে। আপনি যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এইচএসসি পাশ করতে পারবেন। আপনি
চাইলে এইচএসসি পাশ করার পরও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেন।
• এসএসসি পাস করার পর আপনাকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে হবে। ডিপ্লোমা ইন
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পসফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আপনাকে বিএসসি করতে হবে।
আরো পড়ুন: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কী ? কিভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হবেন
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কিভাবে শিখবো ও শিখতে কত দিন সময় লাগে?
এক সময় ছিল যখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে হতো, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল।তবে বর্তমান ইন্টারনেট যুগে এ ধারণা অনেকটাই বদলেছে। এখন আর শুধুমাত্র ডিগ্রির ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না বরং ইন্টারনেটের সুবিধা ও অনলাইন রিসোর্সের কারণে আপনি ঘরে বসেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখা শুরু করতে পারবেন।
বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল, ই-বুক ও প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্টের মাধ্যমে কিছু সময়ের মধ্যেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা অর্জন করা যায়। ডিগ্রি না থাকলেও, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাই বর্তমান সময়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এখন প্রশ্ন হলো , কিভাবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখবো। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর টি হচ্ছে অনেক বড়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে হলো আপনাকে তা কিছু ধাপে ধাপে শিখতে হবে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার ধাপ গুলো হলো:
বেসিক কম্পিউটার সায়েন্স : প্রথমে আপনাকে বেসিক কম্পিউটার সায়েন্স জানতে হবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার জন্য অবশ্যই কম্পিউটার এর ব্যবহার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি একটি ধাপ। বেসিক কম্পিউটার সায়েন্স এর মূল কিছু বিষয় শিখুন। যেমন:
- কীভাবে কম্পিউটার কাজ করে
- কীভাবে সফটওয়্যার তৈরি হয়
- অপারেটিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কিং , ইত্যাদি
আরো পড়ুন : কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রোগ্রামিং : প্রোগ্রামিং হলো সফটওয়্যার তৈরির মূল ভিত্তি। তাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে হলো আপনাকে অবশ্যই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে ও জানতে হবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার জন্য যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখুন। যেমন:
- Python: সহজ এবং জনপ্রিয় ভাষা।
- Java: শক্তিশালী ও বেসিক ধারণা শেখার জন্য উপযোগী।
- C/C++: হার্ডওয়্যার এবং লো-লেভেল প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ভালো।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য জন্য অনলাইন কোর্স, ইউটিউব ভিডিও এবং বই রয়েছে।
ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদমের ভূমিকা অপরিসীম। একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম এর অবদান অনেক।
ডেটা স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম হলো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেরুদণ্ড। এগুলো শেখা ছাড়া দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব নয়। কারণ ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম আপনার কোডকে তাড়াতাড়ি, কার্যকর এবং অপ্টিমাইজড করে তোলে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অথবা মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার জন্য আপনাকে প্রথমে নির্দিষ্ট একটি ফিল্ডে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: HTML, CSS, JavaScript, React, Django
- মোবাইল ডেভেলপমেন্ট: Flutter, React Native, Android (Java/Kotlin), iOS (Swift)
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসেপ্ট : সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসেপ্ট শিখুন। যেমন:
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট মেথডোলজি (যেমন, Agile, Scrum)
- সিস্টেম ডিজাইন ও আর্কিটেকচার
- ডিবাগিং ও টেস্টিং টুলস
- API এবং মাইক্রোসার্ভিস
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে কত দিন সময় লাগে?
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার জন্য কত দিন সময় লাগবে তা সম্পূর্ণ নির্ধারণ করবে আপনার উপর। আপনি নিয়মিত যত বেশি শিখবেন ও প্র্যাকটিস করবেন তত বেশি আপনি তাড়াতাড়ি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে পারবেন।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে সাধারণত ৬-মাস থেকে ১ বছর সময় লাগে। ১-২ বছর সময় প্রয়োজন যদি প্রজেক্ট ও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকে। আর পুরোপুরি পেশাদার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য ২-৩ বছর সময় লাগতে পারে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার শেখা, প্র্যাকটিস এবং কাজের ওপর।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার উৎস বা মাধ্যম
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: Coursera, Udemy, edX, Codecademy, freeCodeCamp
বই: Introduction to Algorithms, Clean Code, Design Patterns
ইউটিউব চ্যানেল: Traversy Media, Programming with Mosh
কমিউনিটি : Stack Overflow, GitHub, Reddit
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান সময়ে অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন একটি পেশা। বর্তমান যুগে সফটওয়্যারের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজেই কোনো না কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় ও ব্যবহার থাকি। সময়ের সাথে সাথে সফটওয়্যারের চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে, যার ফলে নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা ও বাড়ছে।
অনেক সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারকারীদের পচ্ছন্দ নয় বা ব্যবহারযোগ্য নয়। এর মূল কারণ হলো দক্ষ ও অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের অভাব। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে ভালো সফটওয়্যার তৈরি করতে সফল হয় না ,ফলে তৈরি হওয়া সফটওয়্যার গুলো ব্যবহারকারীদের পচ্ছন্দ ও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠে না । এজন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ভালো দক্ষতা অর্জন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নিজেকে দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তবে সহজেই একটি সফল ক্যারিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে ক্যারিয়ারের সুযোগ গুলো হলো:
- ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার
- ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার
- ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার
- ডেটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
- ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার
- সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার
- মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার
FAQ’S
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
উঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর প্রযুক্তিগত শাখা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল কাজ হলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন, উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য কোন যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?
উঃ গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস হতে হবে।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য কোন কোন প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে?
উঃ Python, Java, JavaScript, C++ এবং Ruby সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাকরির সুযোগ কেমন?
উঃ সফটওয়্যার ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার, ডাটা সায়েন্টিস্ট, ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার, সিকিউরিটি অ্যানালিস্টসহ বিভিন্ন পদে চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সের মধ্যে পার্থক্য কী?
উঃ কম্পিউটার সায়েন্স মূলত কম্পিউটিংয়ের বিষয়ে নিয়ে কাজ করে, যেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সফটওয়্যার তৈরির বিষয় নিয়ে দিক নিয়ে কাজ করে।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি শুধু কোডিং শেখা?
উঃ না, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শুধুমাত্র কোডিং শেখা নয়, বরং সফটওয়্যারের ডিজাইন, টেস্টিং, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার করা।
প্রশ্নঃ কোথায় থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে পারি?
উঃ আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (যেমন Coursera, Udemy, edX) থেকে কোর্স করতে পারেন। YouTube এবং বিভিন্ন ব্লগ থেকেও শেখা যায়।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কি গণিত জানা প্রয়োজন?
উঃ হ্যাঁ, প্রোগ্রামিং ও অ্যালগোরিদম বুঝতে গণিতের ভালো জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কত হতে পারে?
উঃ বাংলাদেশে একজন নতুন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন প্রতি মাসে ৩০,০০০ – ৬০,০০০ টাকা হতে পারে এবং অভিজ্ঞতা বাড়লে বেতন ১,০০,০০০ টাকার ওপরে যেতে পারে। বিদেশে বার্ষিক বেতন $৭০,০০০ – $১,২০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।
শেষ কথা
আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু মাত্র একটি পেশা নয়, নতুন কিছু তৈরি করার একটি অন্যতম মাধ্যম সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং। যারা নতুন কিছু তৈরি করে চান এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তাদের জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং একটি অন্যতম ক্যারিয়ার হবে।
বর্তমান ও ভবিষ্যতে প্রযুক্তির গুরুত্ব আরও বাড়বে, তাই এখনই সময় নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জগতে প্রবেশ করার।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ।