কপি রাইটিং কি? ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং করে ইনকাম করার উপায়
বর্তমান সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ আগের মতো সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনাকাটা বা পণ্য সম্পর্কে জানছে না বরং অনলাইনে এড, ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ও ব্যবহার করে পন্য কেনাকাটা ও সম্পর্কে জানছে।
বর্তমান যুগে প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পণ্য বা সেবা বিক্রি করা খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো আজকাল ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য কপি রাইটিং ব্যবহার করছে।
কপি রাইটিং এমন একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি যেখানে লেখার মাধ্যমে গ্ৰাহক বা পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়। কপি রাইটিং এর মাধ্যমে শুধুমাত্র পণ্যের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া না, বরং এর মাধ্যমে কোনো ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান এর সাথে ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয়।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পেশা। বিশেষ করে যারা ঘরে বসে কাজ করতে চান তাদের জন্য। ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে ইনকাম করা যায়। তবে কপি রাইটিং এর মূল কাজ হলো এমন কনটেন্ট তৈরি করা, যা শুধু পড়ার জন্য নয় বরং গ্ৰাহকদের সাথে একটি কাজের সম্পর্ক তৈরি করা এবং পন্য বিক্রি করা।
আজকে এই আর্টিকেল আমরা আলোচনা করব। কপি রাইটিং কি? ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং করে ইনকাম করার উপায় , ইত্যাদি।
Table of Contents
কপি রাইটিং কি ?
কপি রাইটিং এমন একটি লেখার পদ্ধতি যা মূলত বিজ্ঞাপন, ওয়েব পেইজ, প্রমোশনাল মেটেরিয়াল, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা নিয়ে গ্ৰাহকদের জানানো এবং গ্ৰাহকদের আকর্ষন করে তোলা।
কপি রাইটিং অনেকটা এমন, যেমন আপনি যদি আপনার কোনো বন্ধুর কাছ থেকে ভালো একটি সানগ্লাস সম্পর্কে শুনলেন, তার সম্পর্কে শুনে সেটি কিনতে আগ্রহী হলেন। এই প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে মূলত কপি রাইটিং। যা ব্র্যান্ডের মান বাড়ানোর জন্য এবং গ্রাহকদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে লেখা বা করা হয়।
ধরা যাক, আপনি আপনার বন্ধুর কাছে একটি নতুন সানগ্লাস সম্পর্কে শুনলেন। আপনার বন্ধু এমনভাবে বললো, যে সানগ্লাসটি পরলে আপনার চোখ রোদ থেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে, ডিজাইন খুবই স্টাইলিশ এবং তা পড়লে তোমার লুক আরও স্মার্ট হবে।
সানগ্লাস সম্পর্কে এই ধরনের কথা আপনাকে সেই সানগ্লাসটি কিনতে আকৃষ্ট করবে। এখানে, বন্ধু আপনাকে সানগ্লাসটি কেনার জন্য মোটিভেটেড করছে। ঠিক এমনভাবেই কপিরাইটিং কাজ করে। এটাই হচ্ছে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বা কপি রাইটিং স্ট্রাটেজি।
কপি রাইটিং কত প্রকার ও কি কি?
কপি রাইটিং বিভিন্ন ধরনের , প্রতিটি ধরন বিভিন্ন উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয়। কপি রাইটিং এর প্রকারভেদ অনেক হলেও কিছু প্রকার বেশ জনপ্রিয়। নিচে জনপ্রিয় প্রকার গুলো দেওয়া হলো, আমরা এখানে ছোট ছোট করে প্রতিটি প্রকারভেদ এক্সপ্লেইন করছি।
১. ডিরেক্ট রেসপন্স কপি রাইটিং (Direct Response Copywriting)
ডিরেক্ট রেসপন্স কপি রাইটিং এমন একটি কপি রাইটিং স্ট্রাটেজি যেখানে গ্ৰাহকদের কোনো কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়। যেমন,পণ্য কেনা, সাইন আপ করা বা কোনো অফারে সামিল হওয়া।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ইমেইল বা ফেসবুক অ্যাড যেখানে গ্ৰাহকে সরাসরি একটি অফারে সামিল হতে বলা হয়।
ডিরেক্ট রেসপন্স কপি রাইটিং উদাহরণ : আজই কিনুন এবং ২০% ছাড় পান! এখন অর্ডার করুন!
২. SEO কপি রাইটিং (SEO Copywriting)
SEO কপি রাইটিং এমন এক ধরনের কপি রাইটিং স্ট্রাটেজি যেখানে কন্টেন্ট এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র্যাঙ্ক হয়। এই প্রক্রিয়া কন্টেন্ট এ কিওয়ার্ড অপটিমাইজেশন, মেটা ডেসক্রিপশন এবং অন্যান্য SEO টেকনিকের ব্যবহার করা হয়।
SEO কপি রাইটিং এর উদাহরণ: একটি ব্লগ পোস্ট যা ডিজিটাল মার্কেটিং টিপস এর নিয়ে লেখা হয়েছে এবং এই ব্লগ পোস্টে SEO এর জন্য কিছু কিওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, SEO টিপস, ইত্যাদি।
৩. ব্র্যান্ড কপি রাইটিং (Brand Copywriting)
ব্র্যান্ড কপি রাইটিং মূলত একটি ব্র্যান্ডের ইমেজ/ ভ্যালু গড়ে তোলার জন্য করা হয়। এই মার্কেটিং স্ট্রাটেজি পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্যে তুলে ধরতে এবং গ্রাহকদের সাথে একটি সম্পর্ক ভালো তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
ব্র্যান্ড কপি রাইটিং এর উদাহরণ: আমরা শুধু ঘড়ি বিক্রি করি না, আমরা আপনার সময়ের গল্প তৈরি করি।
৪. বিজ্ঞাপন কপি রাইটিং(Advertising Copywriting)
বিজ্ঞাপন কপি রাইটিং মূলত বিজ্ঞাপন তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। যেমন: টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস।
বিজ্ঞাপন কপি রাইটিং উদাহরণ: এই শীতে আমাদের গরম পোশাকের কালেকশনে আছে ৫০% পর্যন্ত ছাড়—শীতেও থাকুন স্টাইলিশ!
৫. সোশ্যাল মিডিয়া কপি রাইটিং (Social Media Copywriting)
সোশ্যাল মিডিয়া কপি রাইটিং সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার) পোস্ট এবং বিজ্ঞাপন তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
সোশ্যল মিডিয়া কপি রাইটিং উদাহরণ: একটি ছোট উপহার, বড় হাসি! আমাদের নতুন গিফট কালেকশন দেখুন। #GiftIdeas #SpreadLove
৬. ইমেইল কপি রাইটিং (Email Copywriting)
ইমেইল কপি রাইটিং এমন একটি কন্টেন্ট তৈরি করার স্ট্রাটেজি যা ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন গুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের নতুন পণ্য, অফার বা সেবা সম্পর্কে জানানো হয়।
ইমেইল কপি রাইটিং উদাহরণ:
বিষয়: একটি বিশেষ উপহার আপনার জন্য!
হ্যালো [নাম],
আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের সাথে থাকার জন্য। তাই, আপনার পরবর্তী কেনাকাটায় একটি স্পেশাল গিফট কোড উপহার দিচ্ছি: THANKYOU20। কোডটি ব্যবহার করে ২০% ডিসকাউন্ট নিন।
অফারটি সীমিত সময়ের জন্য, তাই দেরি না করে অর্ডার করুন!
[ব্র্যান্ড নাম]
৭. সেলস পেজ কপি রাইটিং (Sales Page Copywriting)
সেলস পেজ কপি রাইটিং এমন ধরনের কপি রাইটিং স্ট্রাটেজি যা সেলস পেজ বা ল্যান্ডিং পেজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিবেন, যেন গ্রাহক ক্রয় করতে উৎসাহিত করা হয়।
সেলস পেজ কপি রাইটিং উদাহরণ: আপনার জীবনের সেরা মুহূর্তটি তৈরি করতে সাহায্য করবে আমাদের পণ্য! এখন কিনলে ৩০% ছাড় এবং ফ্রি শিপিং!
৮. নিউজলেটার কপি রাইটিং (Newsletter Copywriting)
নিউজলেটার কপি রাইটিং মূলত কোম্পানির গ্রাহকদের কাছে ইমেইল এর মাধ্যমে পাঠানো হয়।
নিউজলেটার কপি রাইটিং উদাহরণ: আপনি কি জানেন? আমাদের নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চের জন্য বিশেষ ছাড় চলছে! আজই জানুন আমাদের নতুন অফার সম্পর্কে।
কপি রাইটিং এর গুরুত্ব
কপি রাইটিং বর্তমানে ব্যবসা ও মার্কেটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কপি রাইটিং এর গুরুত্ব হলো:
ব্র্যান্ডিং: কপি রাইটিং একটি ব্র্যান্ডের পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করে। ব্র্যান্ডকে বাজারে প্রফেশনাল করে তোলে এবং গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে কপি রাইটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
বিক্রয় বাড়ানো: আকর্ষণীয় কপি রাইটিং পণ্য ও সেবার বিক্রয় বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। কপি রাইটিং গ্ৰাহকদের পণ্যটি কিনার সিদ্ধান্ত নিতে আকর্ষন করে।
বিশ্বাস স্থাপন: ভালো কপি পাঠকদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে। কপি যখন গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান বা সঠিক তথ্য দেয়, তখন তারা ব্র্যান্ডের উপর আস্থা রাখে।
মার্কেটিং কৌশল: কপি রাইটিং একটি সফল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিজ্ঞাপন, ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের সামনে প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং কি?
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং হলো এমন একটি পেশা যেখানে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী ভাবে চাকরি না করে, মুক্তভাবে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য কপি রাইটিং করে ইনকাম করা যায়।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং এর মাধ্যমে আপনি নিজে থেকেই কাজের জন্য চুক্তি করতে এবং আপনার ইচ্ছামতো যেকোনো সময় ও স্থানে কাজ করার স্বাধীনতা পাবেন।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণত ওয়েব কনটেন্ট, ব্লগ পোস্ট, বিজ্ঞাপন, ইমেইল কপি, এবং সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করা হয়।
কাজের জন্য সাধারণত ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম (যেমন Upwork, Fiverr), সোশ্যাল মিডিয়া, অথবা অন্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন : ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং এর ধরণ
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং করে ইনকাম করার বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যেমন:
ওয়েব কপি রাইটিং : ওয়েবসাইটের জন্য কনটেন্ট তৈরি করা, যেখানে হোম পেজ, অ্যাবাউট পেজ, সার্ভিস পেজ ইত্যাদির জন্য আকর্ষণীয় কনটেন্ট লেখা হয়।
ব্লগ কপি রাইটিং : ব্লগ পোস্ট লিখে ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক আনা হয়। ব্লগ কপি রাইটিং এর মাধ্যমে গ্ৰাহকদের সমস্যার সমাধান দেওয়া হয় এবং ব্যবসার জন্য মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়।
ইমেইল কপি রাইটিং : ইমেইল কপি রাইটিং এর মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করে গ্ৰাহকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এটি সাধারণত প্রমোশনাল, নিউজলেটার, এবং ফলো-আপ ইমেইল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া কপি রাইটিং : সোশ্যাল মিডিয়া কপি রাইটিং এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি করা হয়। এটি ব্র্যান্ডের প্রচার, এনগেজমেন্ট বাড়ানো এবং ফলোয়ারদের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞাপন কপি রাইটিং : বিজ্ঞাপন তৈরি করে পণ্য বা সেবার বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন কপিরাইটিং করা হয়। এটি সাধারণত পেইড অ্যাড, প্রিন্ট অ্যাড, ব্যানার অ্যাড এবং ভিডিও অ্যাডের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং কিভাবে শুরু করবেন?
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং একটি অত্যন্ত লাভজনক পেশা। যেখানে আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। চলুন জেনে নিই কিভাবে আপনি ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং শুরু করবেন।
১. দক্ষতা অর্জন করা
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনীয় কিছু দক্ষতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কপি রাইটিংয়ের বিভিন্ন দিক শেখার মাধ্যমে আপনি একজন সফল কপি রাইটার হয়ে উঠতে পারবেন। একজন সফল কপি রাইটার হতে যে সকল দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন:
লেখার দক্ষতা
কপি রাইটিংয়ের এর মূল উদ্দেশ্য হলো কন্টেন্ট এর মাধ্যমে গ্ৰাহকদের আকর্ষন করা। গ্ৰাহদের আকর্ষন করার জন্য কপি রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে লেখার বিভিন্ন স্টাইল নিয়ে দক্ষতা বা ধারণা থাকা জরুরি। যেমন,
ব্লগ পোস্ট: তথ্য পূর্ণ এবং শিক্ষামূলক লেখা যা গ্ৰাহকদের উপকারী ও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে।
ইমেইল কপি: সংক্ষিপ্ত লেখা যা পাঠকদের ইমেইল ওপেন করতে এবং পন্য বা পরিসেবা নিতে উৎসাহিত করে।
বিজ্ঞাপন কপি: ক্রিয়েটিভ এবং আকর্ষণীয় লেখা যা গ্ৰাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাদেরকে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করে।
বিজ্ঞাপন মনোবিজ্ঞান দক্ষতা
একজন কপি রাইটারের জন্য বিজ্ঞাপন মনোবিজ্ঞান বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাঠকদের আচরণ ও মানসিকতা বোঝাতে সাহায্য করে। লেখার সময় আপনাকে অবশ্যই এই বিষয় গুলো নিয়ে জানতে হবে:
- কেন গ্ৰাহকরা একটি পণ্য বা সেবা কিনবেন?
- কীভাবে তাদের সমস্যার সমাধান দেওয়া যায়?
- কোন ধরনের ভাষা বা শব্দ তাদেরকে প্রভাবিত বা আকর্ষন করবে?
SEO দক্ষতা
SEO (Search Engine Optimization) কপি রাইটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। SEO- বিষয়ের লেখা গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে পেজকে উপরে আনতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে যা যা শিখতে হবে:
কীওয়ার্ড রিসার্চ: রিলেভেন্ট কীওয়ার্ড খুঁজে বের করা যা আপনার কন্টেন্টকে সার্চ ইঞ্জিনে সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
মেটা ট্যাগ ব্যবহার: মেটা টাইটেল ও মেটা ডিসক্রিপশন লেখার মাধ্যমে কন্টেন্টকে অপ্টিমাইজ করা।
কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশন: কন্টেন্টের মধ্যে কীওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার, সাবহেডিং এবং ইন্টার্নাল লিংক এড করা। ইত্যাদি
২. পোর্টফোলিও তৈরি করা
আপনার ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য একটি পোর্টফোলিও থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি পোর্টফোলিও আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দেখানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, যা নতুন ক্লায়েন্টদের খুঁজে পেতে বা আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। একজন সফল ফ্রিল্যান্স কপি রাইটার এর জন্য একটি ভালো পোর্টফোলিওতে যে যে বিষয় গুলো থাকা জরুরি:
ব্লগ পোস্ট নমুনা: ব্লগ পোস্ট লিখে দেখান কিভাবে আপনি গ্ৰাহকদের জন্য আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন।
ইমেইল কপি নমুনা: ইমেইল কপি রাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার লেখা কিছু ইমেইল কপি এড করুন যেখানে আপনি গ্ৰাহকদের ইমেইল অপেন এবং ক্লিক করার জন্য আকর্ষন করতে পেরেছেন।
বিজ্ঞাপন কপি নমুনা: বিজ্ঞাপন কপি হচ্ছে একধরনের লেখা যা গ্ৰাহকদের তাড়াতাড়ি আকর্ষণ করে এবং পণ্য বা সেবা কিনতে উৎসাহিত করে। সামাজিক মাধ্যমের বিজ্ঞাপন কপি বা Google Ads কপি এড করতে পারেন।
ওয়েব কপি নমুনা: ওয়েবসাইটের হোমপেজ, অ্যাবাউট পেজ এবং সার্ভিস পেজের জন্য কপি লিখে দেখান।
পোর্টফোলিও তৈরির জন্য জনপ্রিয় টুলস
Canva: পোর্টফোলিও ডিজাইন করার জন্য Canva ব্যবহার করতে পারবেন।
Google Sites: Google Sites বিনামূল্যে একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
Behance ও Dribbble: ডিজাইনার এবং কপি রাইটারদের জন্য পোর্টফোলিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।
৩. ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং শুরু করতে প্রথমেই ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্মে একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এর জন্য কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে আপনি প্রোফাইল তৈরি করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পেতে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম এবং তাদের সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
Upwork: Upwork হলো বড় ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম। আপওয়ার্ক বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়।
- বড় প্রজেক্টের জন্য উপযুক্ত।
- কাজের প্রতিযোগিতা বেশি, তবে আয়ও বেশি।
আরো পড়ুন : আপওয়ার্ক কি ? আপওয়ার্ক এ কাজ পাওয়ার উপায়
Fiverr: Fiverr হলো ছোট-বড় প্রজেক্ট এবং তাড়াতাড়ি কাজের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম। এখানে গিগ তৈরি করে আপনার কপি রাইটিং সার্ভিস অফার করতে পারবেন।
- ছোট-বড় সকল ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত।
- নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ভালো।
আরো পড়ুন : ফাইবার গিগ র্যাংকিং এবং ইম্প্রেশন বাড়ানোর টিপস
Freelancer: Freelancer হলো একটি বহুমুখী ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন ধরনের কপি রাইটিং কাজ পাওয়া যায়। এখানে ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি কমিউনিকেশন করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়ার সুযোগ।
- ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা।
PeoplePerHour: PeoplePerHour হলো ঘন্টাভিত্তিক কাজের জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। এটি ফ্রিল্যান্সারদের ঘন্টায় নির্ধারিত হারে কাজ করার সুযোগ দেয়।
- ঘন্টাভিত্তিক কাজের জন্য ভালো।
- ক্লায়েন্টদের কাছে কাজের সময় ও খরচের ধারণা দেওয়া হয়।
ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য কিছু টিপস:
- প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি এড করা
- আকর্ষণীয় শিরোনাম (Headline) লেখা, যেমন: Experienced Copywriter Specializing in SEO Content and Ad Copy
- Profile Overview লেখা, যেমন: Hello, I’m an experienced copywriter with a passion for SEO-friendly content দক্ষতা এড করা। যেমন: SEO Copywriting, Blog Writing, Sales Copy ,Email Marketing
- পোর্টফোলিও এড করা
৪. সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটার হিসেবে আপনার পরিচিতি বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়ে। যেমন:
লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি
লিংকডইন হল কাজের জন্য একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। কাজ পাওয়া জন্য লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করার জন্য যে যে বিষয় গুলো এড করা উচিত।
- আপনার কাজের নমুনা ও পোর্টফোলিও
- অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিবরণ
- নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করা যেখানে আপনার কপি রাইটিং দক্ষতা দেখাবেন।
ফেসবুক ও টুইটারে অ্যাকাউন্ট তৈরি
ফেসবুক ও টুইটার কপি রাইটারদের জন্য জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। কপিরাইট এর গ্ৰুপ বা পেইজ খুলে আপনার কাজের নমুনা ও পোস্ট করুন।
ক্লায়েন্ট পাওয়ার উপায়
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিংয়ে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং ,বিশেষ করে নতুনদের জন্য।তবে কিছু উপায় অনুসরণ করলে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া সহজ হতে পারে। ক্লাইন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য নেটওয়ার্কিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন,
ফ্রিল্যান্সার ফোরাম : ফ্রিল্যান্সার ফোরাম গুলো নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্সার ফেরাম হলো, Warrior Forum, ProBlogger Job Board, Reddit Freelance Community
ফেসবুক গ্রুপ : ফেসবুকে অনেক কপি রাইটিং এবং ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য গ্রুপ রয়েছে যেখানে ক্লায়েন্টরা ফ্রিল্যান্সার খোঁজেন। কিছু জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ হলো, Copywriter Accelerato, Freelance Copywriting Network
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এক্টিভ : ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম যেমন, Upwork, Fiverr, Freelancer, এবং PeoplePerHour এক্টিভ থেকে নিয়মিত বিড করুন। কাজের জন্য বিড করার সময় কাস্টমাইজড প্রপোজাল লেখার চেষ্টা করবেন।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিংয়ে ইনকাম করার উপায়
বর্তমান সময়ে কপি রাইটিং করে ইনকাম করা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের পন্য বা পরিসেবা দেশ বিদেশে ও অনলাইনের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মার্কেটিং করছে। মার্কেটিং এ কপি রাইটিংয়ের এর গুরুত্ব ও ব্যবহার অপরিসীম।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং একটি লাভজনক পেশা যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট লিখে ইনকাম করতে পারবেন। যেমন:
কন্টেন্ট মার্কেটিং সার্ভিস অফার করে ( যেমন: ব্লগ পোস্ট লেখা,ইমেইল কপি রাইটিং,সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট
বিজ্ঞাপন কপি রাইটিং ( যেমন:গুগল অ্যাডস কপিরাইটিং,ফেসবুক অ্যাডস কপিরাইটিং,ইন্সটাগ্রাম অ্যাডস কপিরাইটিং )
ওয়েবসাইট কন্টেন্ট রাইটিং ( যেমন :হোমপেজ কপি,অ্যাবাউট পেজ কপি,প্রোডাক্ট পেজ কপি)
SEO-কন্টেন্ট রাইটিং ( যেমন:ব্লগ পোস্ট SEO কপি রাইটিং,মেটা ট্যাগস লেখা,কীওয়ার্ড রিসার্চ) ইত্যাদি
কপি রাইটিংয়ে ইনকাম কত?
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটারদের ইনকাম বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তা নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন , দক্ষতা ইত্যাদির উপর। যেমন,
বিগিনার লেভেলের : $10 – $50 প্রতি ঘন্টা
ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের : $50 – $100 প্রতি ঘন্টা
এডভান্সড বা প্রফেশনাল লেভেলের: $100+ প্রতি ঘন্টা
কপি রাইটিং কিভাবে শিখবো?
বর্তমান সময়ে কপি রাইটিং শেখার অনেক উপায় রয়েছে। আপনি অনলাইন এর মাধ্যমে কপি রাইটিং শিখতে পারবেন। বিভিন্ন কোর্স, রিসোর্স ভিডিও,বই ইত্যাদির মাধ্যমে কপি রাইটিং শিখতে পারবেন।
অনলাইন কোর্স : Skillshare, Udemy ,Coursera
ইউটিউব ভিডিও : Neil Patel, Copywriting Secrets TV, Copywriters Workshop
ব্লগ ও ই-বুক : Copyblogger, HubSpot Blog
কপি রাইটিংয়ে সফল হওয়ার কিছু টিপস
- গ্ৰাহকদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করা ও গ্ৰাহকদের সমস্যার সমাধান দেওয়া।
- সহজ ও আকর্ষণীয় ভাষা ব্যবহার করা।
- নির্দিষ্ট কল টু অ্যাকশন (CTA) এড করা।
- বেশি বেশি প্র্যাকটিস করা এবং অন্যান্য কপি রাইটারদের কাজ দেখে তার থেকে শেখা।
FAQ’S
প্রশ্নঃ কপি রাইটিং কি?
উঃ কপি রাইটিং এমন একটি লেখার পদ্ধতি যা মূলত বিজ্ঞাপন, ওয়েব পেইজ, প্রমোশনাল মেটেরিয়াল, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা নিয়ে গ্ৰাহকদের জানানো এবং গ্ৰাহকদের আকর্ষন করে তোলা।
প্রশ্নঃ কপি রাইটিং কীভাবে শিখবো?
উঃ অনলাইনে কোর্স করতে পারেন, কপি রাইটিংয়ের বই পড়তে পারেন এবং প্র্যাকটিস মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ ফ্রিল্যান্স কপি রাইটার হিসেবে কত ইনকাম করতে পারবো?
উঃ এটি আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে। বিগিনার হিসেবে $10 – $50 প্রতি ঘন্টা , অভিজ্ঞ হলে $100+ প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।
প্রশ্নঃ কপি রাইটিংয়ের জন্য জনপ্রিয় টুলস?
উঃ কপি রাইটিংয়ের জন্য জনপ্রিয় টুলস গুলো হলো: Grammarly, SEMrush
শেষ কথা
আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেল পড়ে আপনি কপি রাইটিংয়ের বিষয়ে ভাল ভাবে জানতে পারবেন বা ধারনা লাভ করতে পারবেন। এবং ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং করে কিভাবে ইনকাম করবেন তা নিয়ে আইডিয়া পাবেন।
এখানে কিছু বিষয় ছোটো ছোটো করে ব্যাখ্যা করেছি। যদি বড়ো করে ব্যাখ্যা করতে যাই, কনটেন্ট অনেক বড়ো হয়ে যাবে, এতে করে আপনি আর্টিকেলটি পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই আশা করছি ভবিষ্যতে এসব বিষয় এ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে আর্টিকেল লিখবো।
ফ্রিল্যান্স কপি রাইটিং একটি প্রফেশনাল ক্যারিয়ার। সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে আপনি সহজেই কপি রাইটিং করে ভালো ইনকাম করতে পারবেন।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ।