সহজ নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

সহজ নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

বাংলাদেশী নাগরিক ১৮ বছর বা তার বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারবে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার পর দেখা যায় বিভিন্ন কারণে অনিচ্ছাকৃত ভাবে নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ভুল হয়।

ভুল হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়। আজ এই আর্টিকেল আমরা জানবো,কিভাবে সহজে নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে পারবেন?

Table of Contents

সহজ নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্র দুইটি উপায়ে সংশোধন করতে পারবেন । যেমন:

১)  নির্বাচন অফিসে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন।

২) অনলাইনে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র  সংশোধন।

নির্বাচন অফিসে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আপনাকে জেলা উপজেলা নির্বাচনে অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম নিতে হবে।

সমস্ত তথ্য দিয়ে সতর্কতার সাথে ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট ফর্ম এর সাথে যুক্ত করে ফর্ম জমা দিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কিছু পরিমাণ ফি দিতে হবে। ফি দেওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এর কাজকর্ম শুরু হবে।

অনলাইনে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র  সংশোধন

অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে প্রথমে আপনাকে ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে।

ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পর আপনাকে একাউন্ট তৈরি করতে হবে।  এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে।

এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য যেসব তথ্য দিতে হবে তা দিবেন। অতঃপর বিকাশ, নগদ ইত্যাদি মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দিতে হবে।

ফি নির্ধারণ করা হবে আপনার সংশোধন করার উপর। প্রথমবার আবেদন করলে ২০০  টাকা। দ্বিতীয়বার আবেদন করলে ৩০০ টাকা। এর পর যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।( আনুমানিক এমন হতে পারে)

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড করতে আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পর আপনাকে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে।

লগইন করার পর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন অপশনে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড করতে নিচের বাটন ক্লিক করুন

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজন

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন তা নির্ভর করবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কি কি তথ্য পরিবর্তন করতে হবে তার উপর।

  • প্রধানত জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট , শিক্ষা যোগ্যতা সনদ ইত্যাদি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে অধিক কার্যকরী।
  • ঠিকানা সংশোধন করতে চাইলে পানি বা বিদ্যুৎ বিলের কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র স্ত্রী বা স্বামীর নাম সংশোধন করতে কাবিননামার প্রয়োজন হয়।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ না থাকলে রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট দিতে হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি নির্ভর করে আবেদনের ধরনের উপর। ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র তিনটি পদ্ধতিতে সংশোধন করা হয়।

  • ব্যাক্তিগত তথ্য সংশোধন
  • ঠিকানা পরিবর্তন তথ্য সংশোধন
  • অন্যান্য তথ্য সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি হলো:

  • ব্যাক্তিগত তথ্য সংশোধন = ২৩০টাকা
  • অন্যান্য তথ্য সংশোধন = ১১৫ টাকা
  • উভয় তথ্য সংশোধন = ৩৭৫ টাকা

উপরোক্ত তথ্য আনুমানিক এমন হতে পারে।

আপনি যদি অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন করতে চান তাহলে সংশোধন ফি বিকাশ , নগদ ইত্যাদি ব্যবহার করে দিতে পারেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে

আবেদনর উপর নির্ভর করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কম বা বেশি সময় লাগে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আবেদনের পর  সর্বোচ্চ ৭-৪৫ দিন সময় লাগে। ( আনুমানিক এমন হতে পারে)

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করতে প্রথমে আপনাকে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলতে হবে।

ওয়েবসাইটে Login করার পর হোম পেইজ থেকে প্রোফাইল পেইজে ভিজিট করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য সংশোধন সাধারণত ৩ ভাবে করতে হয়।

  • ব্যাক্তিগত তথ্য
  • ঠিকানা
  • অন্যান্য তথ্য
  • জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যাক্তিগত তথ্য
  • সংশোধন
  • ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনে যেসব তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
  • আবেদনকারীর নিজের নাম ( বাংলা, ইংরেজি)
  • জন্ম তারিখ ও নিবন্ধন নম্বর
  • পিতা ও মাতার নাম সংশোধন ( বাংলা)
  • পিতা ও মাতার ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর
  • লিঙ্গ
  • জন্ম স্থান

উপরোক্ত তথ্য থেকে আপনি এক বা একাধিক তথ্য বাছাই করে এডিট বাটনে ক্লিক করবেন।

আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান তা সিলেক্ট করে বাম পাশে টিক অপশনে ক্লিক করুন। এরপর Next  বাটনে ক্লিক করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে পুনরায় Next  বাটনে ক্লিক করুন।

আরো পড়ুন : নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন নিয়ম

সংশোধন জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইনে ডাউনলোড

সংশোধন আবেদন ভালো ভাবে সাবমিট করা পর  ৭-৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন গ্রহণ করে। আপনার আবেদন গ্ৰহন করলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আপনি যে ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেছেন ওই ওয়েবসাইটে থেকে সংশোধন করা কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।

অথবা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কালেক্ট করতে পারবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম সংশোধন করতে (  SSC, HSC) সনদ পত্র। তাছাড়া ডাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট বা বিয়ের কাবিননামা।

ফর্ম পূরণ করে ফর্মের সাথে ডকুমেন্ট গুলো জমা দিতে পারবেন। আপনি চাইলে অনলাইন বা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে পারবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিকানা অনলাইন সংশোধন করানো হয় না। এর জন্য আপনার জেলা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধন করতে হবে।

সংশোধনের জন্য ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। ঠিকানা সংশোধন ফর্ম কে ১৩ নং ফর্ম বলা হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আপনাকে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতে হবে।

ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্যের বাটনে ক্লিক করে এডিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর জন্ম তারিখ এর বাটনে ক্লিক করে সঠিক তারিখ বসাতে হবে। এরপর টিক চিহ্ন ক্লিক করতে হবে।

সংশোধন ফি বিকাশবা নগদে পরিশোধ করতে পারবেন।  এরপর ডকুমেন্ট হিসেবে  (JSC, SSC , HSC) সনদ পত্র কিংবা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স জমা দিতে হবে ।

আরো পড়ুন : জন্ম নিবন্ধন ( Birth Certificate ) সনদ ডাউনলোড

মা-বাবার নাম সংশোধন

আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রে মা বাবার নাম সংশোধন করতে ব্যাক্তিগত তথ্য সংশোধনের নিয়মে করতে হবে।

আবেদন জমা দিতে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র কপি, ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র কপি, পাসপোর্ট  কপি।

FAQ’S

প্রশ্ন:জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলে পিতা/ মাতা/স্বামীকে মৃত হিসেবে দিলে সংশোধন করতে কিকি প্রয়োজন?

উঃ জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলে পিতা/ মাতা/স্বামীকে মৃত হিসেবে দিলে সংশোধন করতে যা যা প্রয়োজন:
1. পিতার পরিচয়পত্র
2. মাতার পরিচয়পত্র
3. স্বামী পরিচয়পত্র

প্রশ্ন: বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামীর নাম কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বাদ দিতে হবে?

উঃ  বিবাহ বিচ্ছেদ এর পর স্বামীর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বাদ দেওয়ার নিয়ম হলো:
তালাক নামার সঙ্গে NID Register Wnig সহ নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র ছবি পরিবর্তন করতে কি প্রয়োজন?

উঃ  জাতীয় পরিচয়পত্র ছবি পরিবর্তন করতে আবেদনকারীকে নিজে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

প্রশ্ন:  জাতীয় পরিচয়পত্র রক্তের গ্রুপ সংশোধন করতে কি করত হবে?

উঃ জাতীয় পরিচয়পত্র রক্তের গ্রুপ সংশোধন করতে রক্তের গ্রুপ টেস্ট করার রিপোর্ট প্রয়োজন।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র কতবার সংশোধন করা যায়?

উঃ  জাতীয় পরিচয়পত্র এক তথ্য একবার সংশোধন করতে পারবেন।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর কীভাবে পরিবর্তন করতে পারবো?

উঃ  জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম হলো:
নতুন স্বাক্ষর এবং গ্ৰহন যোগ্য প্রমাণ সহ আবেদন করতে হবে।

প্রশ্ন:  পিতা/ মাতা/ স্বামীকে মৃত উল্লেখ করতে চাইলে  কি প্রয়োজন?

উ:  পিতা/ মাতা/ স্বামীকে মৃত উল্লেখ করতে চাইলে  যা প্রয়োজন :
পিতার মৃত্যু সনদ
মাতার মৃত্যু সনদ
স্বামীর  মৃত্যু সনদ

প্রশ্নঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ক্যাটাগরি

উঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ক্যাটাগরি গুলো হলো:
১. নামের সংশোধন
২. জন্ম তারিখ সংশোধন
৩. পিতার নাম সংশোধন
৪. মাতার নাম সংশোধন
৫. ঠিকানা সংশোধন
৬. স্বামী/স্ত্রীর নাম সংশোধন
৭. ছবির সংশোধন
৮. স্বাক্ষর সংশোধন
৯. রক্তের গ্রুপ সংশোধন
১০. অন্যান্য তথ্য সংশোধন

প্রশ্নঃ জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি

উঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি নির্ধারণ করা হবে
আপনার সংশোধন করার উপর। প্রথমবার আবেদন করলে ২০০  টাকা। দ্বিতীয়বার আবেদন করলে ৩০০ টাকা। এর পর যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।( আনুমানিক এমন হতে পারে)।

প্রশ্নঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড

উঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড করতে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে।
ভিজিট করার পর লগইন করে এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য যেসব তথ্য দিতে হবে তা দিবেন । এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে ।

শেষ কথা

আশা করি উপরোক্ত তথ্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করতে সাহায্য করবে।

এবং আপনি খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে পারবেন।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *